Bidhan Chandra Pal's website

Author name: roobon

Articles

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় নাগরিক চেতনাবোধ

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের ক্ষয়ক্ষতি তীব্র হচ্ছে। আর এই ক্ষতির সঙ্গে এখনই বাংলাদেশের মতো দেশগুলো খাপ খাওয়াতে পারছে না। এই শতাব্দীর মধ্যে বিশ্বের তাপমাত্রা দেড় থেকে দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়লে এই ক্ষতি আরও বাড়বে। ফলে বাংলাদেশের জন্য সামনে আরও প্রাকৃতিক দুর্যোগ বেড়ে যাওয়াসহ নানা ধরনের বিপদ অপেক্ষা করছে। আর তাই জাতিসংঘের জলবায়ু তহবিলসহ নানা খাত থেকে বাংলাদেশের মতো দেশের জন্য তহবিল বাড়াতে হবে। জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন-সংক্রান্ত বিজ্ঞানীদের প্যানেল-আইপিসিসির গত ২৮ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদনে এসব আশঙ্কা ও সুপারিশ করা হয়েছে।  সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত আইপিসিসির ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তন, চরম খারাপ আবহাওয়া এবং ভূমি ও সাগরের যথেচ্ছ ব্যবহারের জেরে বিশ্বজুড়ে তীব্র খরা, তাপদাহ ও ঝড়ের সংখ্যাও ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে, যা মানুষ ও বাস্তুতন্ত্রের ক্ষতির উল্লেখযোগ্য কারণ। আর এসব কারণে বিশ্বের ৩৩০ কোটি থেকে ৩৬০ কোটি মানুষ উচ্চ ঝুঁকির মুখে পড়েছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, মানুষের জীবনের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব যত দ্রুত পড়বে বলে ধারণা করেছিলেন বিজ্ঞানীরা, তার চেয়েও দ্রুত এর অভিঘাত দেখা যাচ্ছে। এমনকি দেশগুলো বৈশ্বিক উষ্ণায়ন কমিয়ে আনা ও কার্বন নিঃসরণ কমাতে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে এখনও কার্যত সফল হয়নি। এর ফলে কৃষি, বন, মৎস্য, জ্বালানি, পর্যটনসহ বিভিন্ন খাত সরাসরি ক্ষতির মুখে পড়েছে।  বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও মূল্যায়ন প্রতিবেদনে আমরা দেখেছি, এই শতাব্দীর প্রথম ২১ বছরে বিশ্বের তাপমাত্রা ১.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে গেছে। এর মানে সামনের ৭৯ বছরের মধ্যে তাপমাত্রাকে দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি বাড়তে দেওয়া যাবে না। এটা আসলেই বেশ কঠিন কাজ। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এ পর্যন্ত ১ ডিগ্রির বেশি তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় দুর্যোগ বেড়ে গিয়েছে সেই সঙ্গে নানা ধরনের নেতিবাচক প্রভাবও আমরা টের পাচ্ছি। দরিদ্র দেশগুলো তো অবশ্যই উন্নত দেশগুলোর পক্ষেও এসব দুর্যোগ সামলানো কঠিন হয়ে যাচ্ছে। গত বছর আমরা দেখেছি জার্মানিতে স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা হয়েছে। কানাডার তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠে গিয়ে অনেক মানুষ মারা গেছে, দেশটিতে তীব্র বন্যাও আমরা লক্ষ্য করেছি। যুক্তরাষ্ট্রে একের পর এক ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানছে। আর বাংলাদেশ, ভারত ও চীন তো প্রতি বছর রেকর্ড ভাঙা বন্যার মুখে পড়ছে। এসব কিছু যে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণে হচ্ছে, তা বিজ্ঞানীরা আগের চেয়ে আরও বেশি যুক্তি প্রমাণসহ উপস্থাপন করতে পারছেন এখন।  আর এখন জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে সবচেয়ে আশঙ্কার বিষয় হলো, এটি সরলরেখায় চলছে না। এর মধ্যে রয়েছে বেশকিছু চক্রবৃদ্ধির বিষয়। শুরুতে অল্প বৃদ্ধি অন্য আরও বড় বৃদ্ধির সুযোগ করে দিচ্ছে যা ঠিক কী হারে তার হিসাব করা দুরূহ। কাজেই পরিস্থিতি কিছুটা অনিশ্চিতভাবেই দ্রুত বদলে যাচ্ছে, যে কোনো সময় আরও বদলে যেতে পারে। এজন্য সাম্প্রতিকতম উপাত্ত না পেলে অবস্থার পুরো গুরুত্ব তুলে ধরা কঠিন হচ্ছে। এখন তাই এই চক্রবৃদ্ধির প্রকৃতিগুলো আরও ভালোভাবে বোঝার প্রয়াস চালানো হচ্ছে।  তবে বিভিন্ন দৃশ্যকল্প এবং জলবায়ু মডেল থেকে একটি বিষয় খুব সুস্পষ্ট যে, এ সম্পর্কে আমরা যাই করি না কেন পুরো পৃথিবীর সবাই মিলেই করতে হবে, কাউকে বাদ দেওয়া যাবে না। কারণ ব্যাপারটা পুরো পৃথিবীকে নিয়েই। আমাদের একটিই পৃথিবী, একে বাঁচানোর দায়িত্বটিও আমাদের হাতেই। সামাজিকভাবেও এটি আমাদের সবাইকে করতে হবে। বাঁচবার পথ একটিই- গ্রিন হাউস গ্যাস উদ্গিরণ কমাতে হবে, বহুলাংশে কমাতে হবে এবং তা যত দ্রুত সম্ভব করতে হবে। এর প্রধান গুরুত্বটি দিতে হবে কার্বন ডাই-অপাইড উদ্গিরণের ক্ষেত্রে। তার পরেই আসে মিথেন উদ্গিরণের প্রশ্নটি। যদিও বিজ্ঞানীদের সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, কৃষি খাত থেকে প্রচুর মিথেন গ্যাস নির্গত হয়। কার্বন নিঃসরণের চেয়ে মিথেন গ্যাসের বিশ্বের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেওয়ার ক্ষমতা ২৪ গুণ বেশি। বিশ্বজুড়ে ধ্বংস হওয়া বন, জৈব বর্জ্য, আবর্জনা থেকে শুরু করে পানিতে ডুবিয়ে রাখা ধান বা অন্য কোনো ফসল থেকে মিথেন গ্যাস নির্গত হয়। এরপর নাইট্রোজেন অপাইড, সিএফসি ইত্যাদি আরও কিছু গ্রিন হাউস গ্যাসের প্রশ্নও আসে, যদিও তুলনামূলকভাবে কম গুরুত্বে। আর বিভিন্ন গবেষণা থেকে এটাও প্রমাণিত, গ্রিন হাউস গ্যাস উদ্গিরণ বন্ধ করার বিষয়টি আমাদের পুরো আচরণ, অর্থনৈতিক আশা-আকাঙ্ক্ষা এবং জীবন-যাপনের ভঙ্গির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে সংশ্নেষিত। আর এসব কিছুতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনার মাধ্যমেই কেবল পৃথিবীকে বাঁচানোর পথটি সুপ্রশস্ত হতে পারে। বর্তমান জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের দ্বারাই সৃষ্ট। এর প্রতিকার শুধু বিশেষজ্ঞ বিজ্ঞানীদের ওপর কিংবা দেশের সরকারের ওপর এককভাবে নির্ভর করে না। এখনও এর প্রতিকার করার সুযোগ আমাদের হাতে রয়েছে। পৃথিবীর সব মানুষের দৈনন্দিন অভ্যাস ও জীবনযাত্রার ওপরেই তা অনেকখানি নির্ভর করে। তাই প্রকৃত অর্থেই ভবিষ্যৎ আমাদেরই হাতে। এর প্রতিকার করতে না পারার অর্থ হলো নিজেদের অথবা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে অনিশ্চয়তা ও চরম দুর্ভোগের মধ্যে ঠেলে দেওয়া।  এ প্রতিকারের পথে একদিকে জলবায়ু সম্মেলনের (কপ-২৬) প্রতিশ্রুতি অনুসারে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যেমন :তাপমাত্রা বৃদ্ধি দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ রাখা, প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নের রূপরেখা অনুসারে কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করা, ক্লাইমেট প্যাক্টের ঘোষণার বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা ইত্যাদি খুবই জরুরি হবে। এসব ক্ষেত্রে দেশের সরকার অগ্রগামী ও ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে এবং করতে সচেষ্ট থাকবে- সেটাই আন্তরিকভাবে প্রত্যাশিত।  অন্যদিকে আমাদের পথ দেখাবে, উদ্বুদ্ধ করবে এবং সাহস জোগাবে আমাদের সচেতনতা এবং আমাদের জ্ঞান। এজন্যই জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহতার কথা ভাসা ভাসা শুনলেই হবে না। এর পেছনে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির গবেষণা, নতুন নতুন উদ্ভাবন ও উদ্ঘাটনগুলো কি, নতুন কী হচ্ছে কিংবা হতে যাচ্ছে সেসব কিছুই আমাদের অনুধাবনের প্রচেষ্টা সবার দিক থেকেই থাকতে হবে। আর তা হলেই আমরা বুঝতে পারব আমাদের এখন কী করতে হবে এবং কতটুকু করতে হবে। মজার ব্যাপার হলো, এই করার মধ্যে শুধু যে ত্যাগের ও বর্জনের বিষয় আছে তাই নয়, বরং পরিবেশের সঙ্গে একটি সুন্দর সামঞ্জস্যপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি এবং জীবনযাত্রাকে আরও সুন্দর এবং উপভোগ্য করে তোলার বিষয়ও ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত আছে।  পরিশেষে, আমরা সারা বিশ্বের মানুষ একসঙ্গে সম্মিলিতভাবে সব মানুষের জীবনযাত্রাকে সুন্দর ও স্থায়িত্বশীল করার প্রয়াসে প্রয়াসী এবং তা করতে পারব- এই উপলব্ধি আমাদের ভেতরে বিশ্ব নাগরিক হয়ে ওঠার মতো একটি চেতনাবোধের জন্ম দেয়। এই চেতনাবোধ ধীরে ধীরে ব্যক্তি থেকে সমাজে, দেশ থেকে অন্য দেশে নির্বিশেষে সবার মধ্যে সম্প্রসারিত হোক এবং জাগ্রত থাকুক- সেটাই একান্ত প্রত্যাশা হবে। সেটাই জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় অন্যতম সহায়কের ভূমিকা পালন করবে বলেই আমি মনে-প্রাণে বিশ্বাস করি। 

Articles

উন্নত নগর ও তরুণ সমাজ: বর্তমান ও আগামীর বাংলাদেশ

উন্নত নগর ও তরুণ সমাজ: বর্তমান ও আগামীর বাংলাদেশ লেখা:বিধান চন্দ্র পাল প্রথম আলো দৈনিকে প্রকাশ: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৭: ৪৯ একটি নগর অনেকটা মানবজীবনের মতোই সচল। নগরকেও মানবজীবনের মতো প্রতিনিয়ত সংগ্রামের মধ্য দিয়ে উন্নত হতে হয়। ‘উন্নত’ অর্থ অনেক কিছুই হতে পারে। তবে নগর উন্নয়নের সঙ্গে যুক্ত থাকে অর্থ, জ্ঞান ও বিজ্ঞানের চর্চায় অগ্রগতি; পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন ও মান বিবেচনায় রেখে নগরের ভৌত ও সংস্কৃতিগত শ্রীবৃদ্ধি এবং সর্বোপরি সব উৎপাদন, শক্তি ও সম্পদের পরিকল্পিত ও সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারা।   বাংলাদেশকে ছোট ও বড় নগরের সমন্বয় বললেও বোধ হয় এখন আর অত্যুক্তি হবে না। এই অপরিকল্পিত নগর ও আচরণের কিছু বৈশিষ্ট৵ ও কার্যকলাপ খুঁজে পাওয়া যায় যেমন: সুরম্য অবকাঠামো নির্মাণ, যত্রতত্র অপরিকল্পিত স্থাপনা, খাওয়াদাওয়া, পার্টি আয়োজন ইত্যাদি। বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত নগর থেকে শিক্ষা নেওয়ার প্রবণতা বাংলাদেশে কিছুটা থাকলেও সচেতনতা চর্চার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মতো করে সেগুলোকে ঢেলে সাজাবার সক্ষমতা আমরা এখনো অর্জন করতে পারিনি।

Roobon

Typically replies within a day

Hello, Welcome to the site. Please click below button for chatting me through messenger.

Translate »
Scroll to Top